
নিজস্ব প্রতিবেদক।
মহেশখালীর কালারমারছড়ার ইউনুছখালীতে জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালিয়েছে শহিদ উল্লাহ ও তার ভাইয়েরা। হাবিবুর রহমান নামের এক কৃষকের পানের বরজের চালা কেটে দেওয়া হয় এবং একাধিকবার তাঁর জমিতে ঢুকে দুর্বৃত্তায়ন চালানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। সর্বশেষ রবিবার সকালে অস্ত্রধারী নিয়ে গিয়ে বরজে হামলা চালানো হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হাবিব জানান, তাঁর পরিবার এখন মারাত্মক আতঙ্কে সময় পার করছে। বারবার স্থানীয় প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও প্রতিকার মেলেনি। এলাকাবাসীর দাবি, এমন ঘটনার কঠোর বিচার না হলে সহিংসতা আরও বাড়বে।
৪ঠা মে সকাল ৯টায় হাবিবের বরজে অস্ত্রসহ দল নিয়ে ঢুকে তাণ্ডব চালায় শহিদ উল্লাহ গং। এর আগে ২রা মে প্রথম দফায় চালা কেটে দেন তাঁরা। শহিদ, খলিলুর রহমান, করিম উল্লাহ, সোহাগ ও স্থানীয় কৃষকলীগ নেতা রুহাতুল ইসলামের নাম উঠে এসেছে এই হামলায় নেতৃত্বদানের অভিযোগে। হাবিব জানান, তাদের আচরণ একেবারে সুপরিকল্পিত; সবার সামনে সশস্ত্র অবস্থায় হামলা চালিয়ে আবার দিব্যি এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। এসব হামলায় তার পরিবার আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ এখনও চোখে পড়েনি।
৫ মে দুপুরে আবারও তাণ্ডব চালানো হয় হাবিবের অপর কৃষিজমিতে, যা ইউনুছখালী বাজারের পাশেই অবস্থিত। শহিদ উল্লাহর নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত এসে সেখানে চাষাবাদে ব্যবহৃত সামগ্রী ভাঙচুর করে, জমি ঘিরে থাকা বেড়া উপড়ে ফেলে এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চলে যায়। এভাবে দিনের পর দিন জমি ও ফসল নষ্ট করার পাশাপাশি পরিবারটিকে নিরবচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী চাপে রাখা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, জমি দখলের উদ্দেশ্যেই এমন অপতৎপরতা চলছে। প্রশাসনের নীরবতা এসব দুর্বৃত্তকে আরও বেপরোয়া করে তুলছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
হাবিবের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দফা শালিস ও মুচলেকার পরও হামলা বন্ধ হয়নি। স্থানীয় মেম্বার, চেয়ারম্যান এমনকি থানার মধ্যস্থতায় একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। একবার মুচলেকা দিয়ে মুক্ত হলেও শহিদ উল্লাহ আবার আগের পথেই ফিরে যান। তাদের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে, তারা কোনো আইনকানুনের তোয়াক্কা করে না। বরং মুচলেকার পরই আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। হাবিব বলেন, “প্রশাসনের কেউ কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আমরা জীবন দিয়ে জমি রক্ষা করতে পারব না।
২০২৩ সালের ২৬ জুলাই হাবিবুর রহমানের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছিল শহিদ উল্লাহর নেতৃত্বাধীন একটি গোষ্ঠী। সে সময় তিনি থানায় লিখিত অভিযোগও করেন। পুলিশ উভয়পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে মুচলেকা নিলে শহিদকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সে ঘটনার পরও বারবার একই চিত্র। জমি দখলের চেষ্টায় হামলা, ভয়ভীতি ও বেপরোয়া আচরণ। এলাকাবাসী বলছেন, বিষয়টি এখন শুধু ব্যক্তি বিরোধ নয়—এটি একটি সংঘবদ্ধ দুর্বৃত্তচক্রের অংশ হয়ে উঠেছে, যা দ্রুত দমন করা না গেলে আরও প্রাণহানি ঘটতে পারে।
অভিযুক্ত শহিদ উল্লাহ এক পর্যায়ে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বলেন, “জমি দখল করতে কাউকে খুন করতে হলেও করব, কেউ বাধা দিলে তাকেও খুন করা হবে।” তার এই বক্তব্য শোনার পর এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। একাধিক ব্যক্তি তাকে থানায় বিচার চাইতে বললেও শহিদ জানান, “শালিস-থানা কিছুই মানি না, খুন করে হলেও জমি বুঝে নেব।” এ ধরনের বক্তব্য শুধু সন্ত্রাস নয়, আইন ও সমাজের প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ। এলাকাবাসী দ্রুত পুলিশ প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।